1.3 পরিমাপের পদ্ধতি

 


দৈর্ঘ্য পরিমাপ (Length Measurement): 

সঠিক ও নির্ভুল পরিমাপ পদার্থবিদ্যার অন্যতম লক্ষ্য। আমরা মূলত দৈর্ঘ্য পরিমাপ নিয়েই আলোচনা করবো।

দৈর্ঘ্য পরিমাপের পদ্ধতিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় - 1) প্রত্যক্ষ পদ্ধতি (direct method) এবং 2) পরোক্ষ পদ্ধতি (indirect method)।

প্রত্যক্ষ পদ্ধতি: 

এই পদ্ধতিতে কোন দৈর্ঘ্য পরিমাপ করার জন্য সেটিকে সরাসরি কোনো প্রমাণ এর সঙ্গে তুলনা করা হয়। যেমন স্কেলের সাহায্যে আমরা একটি দন্ডের দৈর্ঘ্য মাপতে পারি। এক্ষেত্রে স্কেলের দাগগুলি প্রমাণ দৈর্ঘ্যের মান সূচিত করে।

এই পদ্ধতিতে খুব সূক্ষ্ম দৈর্ঘ্য পরিমাপ করার জন্য ভার্নিয়ার ক্যালিপার্স (vernier calipers), স্ক্রু গেজ (screw gauge)  ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

পরোক্ষ পদ্ধতি: 

খুব বড় দূরত্ব (যেমন কোনো তারার দূরত্ব) বা খুব ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্য (যেমন অণুর ব্যাসার্ধ) পরিমাপ করার জন্য পরোক্ষ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেমন, ত্রিভুজের সাহায্যে পরিমাপ করার পদ্ধতি (triangulation method), প্রতিফলন বা প্রতিধ্বনি পদ্ধতি (reflection বা echo method), লম্বন পদ্ধতি (parallax method) ইত্যাদি হল পরোক্ষ পদ্ধতি।

তোমরা জানো দৈর্ঘ্য পরিমাপের প্রচলিত এককগুলি হল mm, cm, m, km, ft, in., mi ইত্যাদি। তাই এই দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রও ব্যবহার করতে হয়। যেমন একটি মাঠের দৈর্ঘ্য ও একটি তারের ব্যাস একই যন্ত্র দিয়ে মাপা যায় না, কারন এদের মান এর মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। আবার একটি ছোট গোলকের ব্যাস ও টেবিলে রাখা একটি বই এর উচ্চতা মাপার জন্য আলাদা যন্ত্র ব্যবহার করতে হয়, কারণ এদের আকৃতি আলাদা।

সাধারণ স্কেল:


এটি হলো কাঠ বা ধাতু দিয়ে তৈরি একটি পাতলা পাত, যার একটি ধারে দৈর্ঘ্য বরাবর সেন্টিমিটার স্কেলে দাগ কাটা থাকে। আর অন্য ধার বরাবর ইঞ্চি স্কেলে দাগ কাটা থাকে। প্রত্যেক সেন্টিমিটার সমান দশ ভাগে ভাগ করা থাকে। অর্থাৎ সেন্টিমিটার স্কেলটিতে ক্ষুদ্রতম ঘরের মান রাখা হয় 1 mm অর্থাৎ 0.1 cm। 


একেবারে বাম প্রান্তে থাকে 0 cm এর দাগ, আর স্কেলটির দৈর্ঘ্য বরাবর একেবারে ডানপ্রান্তে থাকে 15 cm, 30 cm, 50 cm বা 100 cm এর দাগ। 100 cm পর্যন্ত দাগ কাটা স্কেলকে বলা হয় মিটার স্কেল

পরিমাপ পদ্ধতি: 

সোজা দন্ড বা তারের দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য এই ধরনের স্কেল ব্যবহৃত হয়। যে দন্ডের দৈর্ঘ্য মাপতে হবে তার এক প্রান্ত মিটার স্কেলের 0 দাগে বা অন্য কোনো সুবিধাজনক স্থানে রাখতে হবে। দন্ডের অন্য প্রান্তটি স্কেলের যে দাগের সাথে মিলে যাবে তার পাঠ নিতে হবে। এই দুটি পাঠের পার্থক্যই হলো দন্ডটির দৈর্ঘ্য। সাধারণভাবে বলা যায়, যে দন্ডের দৈর্ঘ্য মাপতে হবে তার এক প্রান্ত যদি X দাগে স্থাপন করা হয় এবং অন্য প্রান্ত যদি Y দাগের সাথে মিলে যায় তাহলে দন্ডটির দৈর্ঘ্য L হবে X ও Y - এর বিয়োগফল অর্থাৎ L = Y - X। এই স্কেলের সাহায্যে মিলিমিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্য সঠিকভাবে পরিমাপ করা যায়। এরচেয়ে সূক্ষ্ম পরিমাপ করতে হলে অন্য যন্ত্র ব্যবহার করতে হয়।

কোনো সরলরেখার দৈর্ঘ্য মেপে যদি দেখা যায়, সেটি ঠিক 5 cm বা 8 cm তবে সরলরেখাটির দৈর্ঘ্য লেখা উচিত 5.0 cm বা 8.0 cm (এই বিষয়ে পরে আলোচনা করা হবে)।

কোনো সরলরেখার একটি প্রান্ত স্কেলের কোনো দাগের সঙ্গে মিলিয়ে ধরা হলে অন্য প্রান্তটি কোনো দাগ এর সঙ্গে পুরোপুরি নাও মিলতে পারে। তখন পাঠ চোখের আন্দাজে (eye estimation) নিতে হয়। 

যেমন, কোন সরলরেখার বাম প্রান্তের পাঠ 1.0 cm এবং ডান প্রান্তের পাঠ 8.4 cm ও 8.5 এর মোটামুটি মধ্যবর্তী হলে ধরা যায়, ডান প্রান্তের পাঠ 8.45 cm। সুতরাং, চোখের আন্দাজের ওপর নির্ভর করে রেখাংশটির দৈর্ঘ্য, (8.45 - 1) = 7.45 cm লেখা যেতে পারে। তবে 7.45 পাঠের শেষ অংকটি মোটেই নির্ভরযোগ্য নয়। চোখের আন্দাজের ওপর নির্ভর করে পাঠটিকে কখনোই 7.43 cm বা 7.46 cm ইত্যাদি লেখা উচিত নয়।

ভার্নিয়ার যন্ত্র (Vernier Caliper):

1631 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি গণিতজ্ঞ পিয়ার ভার্নিয়ার (Pierre Vernier) এটি আবিষ্কার করেন।

আমরা দেখেছি, সাধারণ স্কেলে ক্ষুদ্রতম ঘরের দৈর্ঘ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই 1 mm (কোনো কোনো স্কেলে 0.5 mm) রাখা হয়। তাই এর থেকে সূক্ষ্মভাবে কোনো দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে হলে ভার্নিয়ার যন্ত্র (vernier caliper) ব্যবহার করতে হয়। 

বিবরণ:

M হল একটি হল একটি সাধারণ স্কেল, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যার ক্ষুদ্রতম ঘরের দৈর্ঘ্য 1 mm বা 0.1 cm। এটিকে মূল স্কেল (main scale) বলা হয়। V হলো ভার্নিয়ার স্কেল, এটি একটি ছোট স্কেল যা বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে মূল স্কেলের গায়ে লাগানো থাকে এবং মূল স্কেলের গা বরাবর এদিক-ওদিক সরানো যায়। এই ছোট্ট স্কেলটিতেও সমান দৈর্ঘ্যের কয়েকটি ঘর কাটা থাকে। এই স্কেলের ক্ষুদ্রতম ঘর মূল স্কেলের ক্ষুদ্রতম ঘর অপেক্ষা দৈর্ঘ্যে সামান্য কম হয়। এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যে ভার্নিয়ার স্কেলের 10 টি ক্ষুদ্রতম ঘর, মূল স্কেলের 9 টি ক্ষুদ্রতম ঘরের সমান।

পরিমাপের পদ্ধতি:

আগেই বললাম, ভার্নিয়ার স্কেলের ক্ষুদ্রতম ঘরের মান মূল স্কেলের ক্ষুদ্রতম ঘরের মান থেকে কম হয়। ধরো, মূল স্কেলের ক্ষুদ্রতম ঘরের দৈর্ঘ্য `a` একক এবং ভার্নিয়ার স্কেলের ক্ষুদ্রতম ঘরের দৈর্ঘ্য `b` একক। আমাদের উদ্দেশ্য হলো সূক্ষ্মতম দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা। 

তোমরা একটু লক্ষ্য করে দেখো এই স্কেলের সাহায্যে আমরা সূক্ষ্মতম যে দৈর্ঘ্য মাপতে পারি সেটি হলো `c = (a - b)` একক। এই পার্থক্যকে ভার্নিয়ার স্থিরাঙ্ক (vernier constant) বলা হয়। অর্থাৎ, ভার্নিয়ারের সাহায্যে পরিমাপযোগ্য সূক্ষ্মতম দৈর্ঘ্যই হলো ভার্নিয়ার স্থিরাঙ্ক (c)।

ভার্নিয়ার স্থিরাঙ্ক নির্ণয়: 

দেখো '`a`' যেহেতু মূল স্কেলের ক্ষুদ্রতম ঘরের মান, তাই আমরা এর মান জানি 1 mm বা 0.1 cm। আমাদের এখন '`b`' এর মান জানতে হবে। এই মান জানার একমাত্র উপায় হলো তোমাকে দেখতে হবে একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের মধ্যে ভার্নিয়ার স্কেলের কত ঘর, মূল স্কেলের ঠিক কত ঘরের সাথে মিলে যায়। যেমন এক্ষেত্রে দেখো, ভার্নিয়ার স্কেলের 10 টি ক্ষুদ্রতম ঘরের মান = মূল স্কেলের 9 টি ক্ষুদ্রতম ঘরের মান। তাহলে, আমরা বলতেই পারি ভার্নিয়ার স্কেলের 1 টি ক্ষুদ্রতম ঘরের মান = মূল স্কেলের `\frac{9}{10}` টি ক্ষুদ্রতম ঘরের মান। আমরা জানি, মূল স্কেলের 1 টি ক্ষুদ্রতম ঘরের মান, `a = 1` mm। সুতরাং, ভার্নিয়ার স্কেলের 1 টি ক্ষুদ্রতম ঘরের মান, `b = \frac{9}{10} × 1` mm `= \frac{9}{10}` mm `= 0.9` mm `= 0.09` cm।

সুতরাং, ভার্নিয়ার স্থিরাঙ্ক, `c = a - b = 1 - 0.9 = 0.1` mm `= 0.01` cm। অর্থাৎ, আমরা এই স্কেলের সাহায্যে 0.01 cm পর্যন্ত সূক্ষ্মতম দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে পারবো।

লক্ষ্যনীয়, ভার্নিয়ার স্কেলের কত ঘর, মূল স্কেলের ঠিক কত ঘরের সমান তার ভিত্তিতে ভার্নিয়ার স্থিরাঙ্কও পাল্টে যাবে। আমাদের প্রথম কাজ হবে মূল স্কেলের ক্ষুদ্রতম ঘরের মান `(a)` বের করা। সেটা মূল স্কেল দেখেই জানা যাবে। এরপর দেখবো নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের মধ্যে ভার্নিয়ার স্কেলের কত ঘর মূল স্কেলের ঠিক কত ঘরের সাথে সমান। সেই সম্পর্কটি ব্যবহার করে, ভার্নিয়ার স্কেলের একটি ক্ষুদ্রতম ঘরের দৈর্ঘ্য `(b)` বের করবো। এরপর `c = a - b` বের করবো।

সাধারণভাবে লেখা যায়, যদি মূল স্কেলের একটি ক্ষুদ্রতম ঘরের দৈর্ঘ্য m একক এবং ভার্নিয়ার স্কেলের ক্ষুদ্রতম 'y' ঘর = মূল স্কেলের ক্ষুদ্রতম 'x' ঘরের সমান হয়, তাহলে ভার্নিয়ার স্কেলের ক্ষুদ্রতম 1 ঘর = মূল স্কেলের ক্ষুদ্রতম `\frac{x}{y}` ঘর `= \frac{x}{y} ×` মূল স্কেলের একটি ক্ষুদ্রতম ঘরের দৈর্ঘ্য `= \frac{x}{y} × m` একক

সুতরাং, ভার্নিয়ার স্থিরাঙ্ক, c = মূল স্কেলের একটি ক্ষুদ্রতম ঘরের দৈর্ঘ্য - ভার্নিয়ার স্কেলের একটি ক্ষুদ্রতম ঘরের দৈর্ঘ্য `= m - \frac{x}{y} × m = (1 -\frac{x}{y}) × m` একক

উদাহরণ: একটি ভার্নিয়ের ক্যালিপারের মূল স্কেলের একটি ক্ষুদ্রতম ঘরের পরিমাপ 1 mm। এক্ষেত্রে ভার্নিয়ার স্কেলের 20 ঘর = মূল স্কেলের 16 ঘর। এই ভার্নিয়ার ক্যালিপারটির স্থিরাঙ্কের মান কত?

ভার্নিয়ার স্কেলের 20 ঘর = মূল স্কেলের 16 ঘর

বা, ভার্নিয়ার স্কেলের 1 ঘর = মূল স্কেলের `\frac{16}{20}` ঘর 

ভার্নিয়ার স্থিরাঙ্ক, c = মূল স্কেলের একটি ক্ষুদ্রতম ঘরের দৈর্ঘ্য - ভার্নিয়ার স্কেলের একটি ক্ষুদ্রতম ঘরের দৈর্ঘ্য `= 1 mm - \frac{16}{20} × 1` mm `= 1 - \frac{4}{5} = \frac{1}{5}` mm = 0.2 mm

অজানা দৈর্ঘ্যের পরিমাপ:

ধরো, একটি ছোট দন্ডের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে হবে। দন্ডটিকে মূল স্কেলের গায়ে এমনভাবে বসানো হয়, যাতে দন্ডটির বাম প্রান্ত মূল স্কেলের 0 দাগের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। এরপর ভার্নিয়ার স্কেলটিকে মূল স্কেলের গা বরাবর এমনভাবে সরানো হয় যাতে, ভার্নিয়ার স্কেলের 0 দাগ দন্ডটির ডান প্রান্তকে স্পর্শ করে। এই অবস্থায় দুটি পাঠ নিতে হয়, 1) ভার্নিয়ার স্কেলের 0 দাগের ঠিক বামদিকে মূল স্কেলের যে দাগটি আছে তার পাঠ `(a)` এবং 2) ভার্নিয়ার স্কেলের যে দাগ মূল স্কেলের যে কোনো একটি দাগের সাথে পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে সেই দাগটির পাঠ (b)। তাহলে, দন্ডটির দৈর্ঘ্য হবে, `l = a + b × c`

কীভাবে এই মান বেরোচ্ছে চলো একটু বোঝার চেষ্টা করি।

কোনো বস্তুর দৈর্ঘ্য মাপার সময়ে, ভার্নিয়ার স্কেলের 0 দাগটি মূল স্কেলের 0 cm দাগ থেকে যত দূরত্বে থাকে, সেটিই হলো বস্তুটির দৈর্ঘ্যের পরিমাপ।

ধরো, ভার্নিয়ার স্থিরাঙ্ক 0.01 cm। মানে মূল স্কেলের একটা ক্ষুদ্রতম ঘর ও ভার্নিয়ার স্কেলের একটা ক্ষুদ্রতম ঘরের মানের যে পার্থক্য সেটা হলো 0.01 cm। ধরো, বস্তুটির দৈর্ঘ্য পরিমাপ করার সময় ভার্নিয়ার স্কেলের 0 দাগের ঠিক আগে মূল স্কেলের পাঠ, a = 1.1 cm এবং ভার্নিয়ার স্কেলের b = 4 দাগটি মূল স্কেলের 1.5 cm দাগ বরাবর আছে। তাহলে এই অবস্থায় ভার্নিয়ার স্কেলের 3 দাগটি মূল স্কেলের 1.4 cm দাগ থেকে 0.01 cm দূরে আছে, 2 দাগটি মূল স্কেলের 1.3 cm দাগ থেকে 0.02 cm দূরে আছে, 1 দাগটি মূল স্কেলের 1.2 cm দাগ থেকে 0.03 cm দূরে আছে, 0 দাগটি মূল স্কেলের 1.1 cm দাগ থেকে 0.04 cm দূরে আছে। সুতরাং, ভার্নিয়ার স্কেলের 0 দাগটি মূল স্কেলের 0 cm দাগ থেকে 1.1 cm + 0.04 cm (অর্থাৎ `l = a + b × c`) = 1.14 cm দূরে আছে।

স্ক্রু গেজ (Screw Gauge):

এই যন্ত্রের সাহায্যে ক্ষুদ্র বস্তুর দৈর্ঘ্য, সরু তারের ব্যাস, সরু চোঙের ব্যাসার্ধ ইত্যাদি পরিমাপ করা যায়।

এই যন্ত্রে U আকৃতির একটি মোটা ধাতব পাত থাকে। এর বাম বাহুর উপরের অংশে একটি ছোট দন্ড A স্থায়ীভাবে আটকানো থাকে। A দন্ডের ডানপ্রান্তটি সমতল। U - এর অপর বাহুতে রয়েছে একটি ফাঁপা নল C, যার মধ্য দিয়ে একটি দন্ড B সংযুক্ত থাকে। C এর ভেতরে এমনভাবে খাঁজ কাটা থাকে, যাতে B দন্ডটি সামনে পেছনে সরানো যায়। B এর বামপ্রান্তও সমতল থাকে। C নলে মিলিমিটারে দাগাঙ্কিত একটি রৈখিক স্কেল (L) থাকে। এর বাইরের অংশ অপর একটি ফাঁপা নল D দ্বারা বেষ্টিত থাকে। B এর ডানপ্রান্ত C এর ভেতর দিয়ে গিয়ে D এর ডান প্রান্তের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে যুক্ত থাকে। ফলে D চোঙকে ঘোরালে B -কেও এদিক ওদিক সরানো যায়। D এর বামপ্রান্তে 50 টি বা 100 টি ঘরবিশিষ্ট চক্রাকার স্কেল (R) থাকে। D -কে ঘোরালে R-ও L-এর গা বরাবর ঘোরে এবং সাথে L এর দৈর্ঘ্য বরাবরও সরতে থাকে। B কে যখন একেবারে বাঁদিকে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন A কে পুরোপুরি স্পর্শ করে। এই অবস্থায় A ও B এর মধ্যে কোনো ফাঁক থাকে না। কোনো কোনো স্ক্রু গেজে D এর ডানপ্রান্তে একটি রিং E আলগাভাবে লাগানো থাকে। সেক্ষেত্রে B কে এদিক ওদিক সরানোর জন্য E কে ঘোরানো হয়। A ও B যখন পরস্পরকে স্পর্শ করে বা মাঝে রাখা কোন বস্তুর দুদিক যখন A ও B এর সংস্পর্শে আসে, তখন E কে ঘোরালেও B আর এগোয় না, E রিংটি পিছলে যেতে থাকে।

পরিমাপের সময়, চক্রাকার স্কেলের ঠিক বাঁ দিকে রৈখিক স্কেলের শেষ যে ঘরটি দেখা যায় সেটি হল রৈখিক স্কেল পাঠ `(a)`। আর রৈখিক স্কেলের অনুভূমিক রেখাটির সঙ্গে চক্রাকার স্কেলের যত নম্বর দাগ পুরোপুরি মিলে যায়, সেটি চক্রাকার স্কেলের পাঠ `(b)`। 

স্ক্রু পিচ ও লঘিষ্ঠ ধ্রুবক (Screw pitch & least count):

একবার পূর্ণ আবর্তনের ফলে চক্রাকার স্কেলটি রৈখিক স্কেল বরাবর যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে স্ক্রু পিচ বলে। স্ক্রু পিচ নির্ণয় করার জন্য প্রথমে চক্রাকার স্কেলের 0 দাগকে রৈখিক স্কেলের অনুভূমিক রেখাটির সঙ্গে মিলিয়ে ধরা হয়, এই অবস্থায় রৈখিক স্কেলের পাঠ নেওয়া হয়। এবার স্ক্রু-কে একবার পূর্ণ আবর্তন করানো হয়, অর্থাৎ চক্রাকার স্কেলটি একবার ঘুরিয়ে সেটির 0 দাগটিকে আবার রৈখিক স্কেলের অনুভূমিক রেখাটির সঙ্গে মেলানো হয়। এই অবস্থায় আবার রৈখিক স্কেলের পাঠ নেওয়া হয়। রৈখিক স্কেলের এই দুই পাঠের অন্তরই হলো স্ক্রু পিচ। সাধারণত এর মান রৈখিক স্কেলের একটি ক্ষুদ্রতম ঘরের দৈর্ঘ্যের সমান হয়। যেমন রৈখিক স্কেলটিতে ক্ষুদ্রতম ঘর 1 mm হলে স্ক্রু পিচ = 1 mm = 0.1 cm।

স্ক্রু গেজের লঘিষ্ঠ ধ্রুবকের মান যা, ততখানি সূক্ষ্মতা পর্যন্ত কোনো দৈর্ঘ্য পরিমাপ সম্ভব। এখন একটু বোঝার চেষ্টা করি। দেখো এই যন্ত্রের সাহায্যে আমরা যে সূক্ষ্ম দৈর্ঘ্য মাপতে পারি তা হলো চক্রাকার স্কেলের একটি ক্ষুদ্রতম ঘরের মান। আগের আলোচনাতে বললাম, একবার চক্রাকার স্কেলের একবার পূর্ণ আবর্তন করলে যে দৈর্ঘ্য যায় সেটি হল স্ক্রু পিচ। ধরো, চক্রাকার স্কেলের মোট ঘরসংখ্যা 100 টি, চক্রাকার স্কেলের একবার পূর্ণ আবর্তনের ফলে এটি রৈখিক স্কেল বরাবর 1 mm সরলো। তাহলে এর স্ক্রু পিচ 1 mm বা 0.1 cm। সুতরাং, বলতে পারি চক্রাকার স্কেলে 100 টা ক্ষুদ্রতম ঘরের মান = 0.1 cm

বা, চক্রাকার স্কেলে 1 টা ক্ষুদ্রতম ঘরের মান = `\frac{0.1}{100} = 0.001` cm।

অর্থাৎ, স্ক্রু পিচ ও চক্রাকার স্কেলের মোট ঘর সংখ্যার অনুপাত কে লঘিষ্ঠ ধ্রুবক বলা হয়। সুতরাং, লঘিষ্ঠ ধ্রুবক, c = স্ক্রু পিচ/চক্রাকার স্কেলের মোট ঘর সংখ্যা

পরিমাপের পদ্ধতি: যে বস্তুটির বেধ মাপতে হবে সেটিকে A ও B -এর মাঝে এমনভাবে বসানো হয়, যাতে A ও B প্রান্ত দুটি পাতটির দুটি দিক স্পর্শ করে থাকে। এই অবস্থায় দুটি পাঠ নিতে হয়। 1) রৈখিক স্কেলের পাঠ `(a)` এবং 2) চক্রাকার স্কেলের পাঠ `(b)`। পাতের বেধ, d = রৈখিক স্কেলের পাঠ `(a) +` চক্রাকার স্কেলের পাঠ `(b) ×` লঘিষ্ঠ ধ্রুবক `(c)`

উদাহরণ: একটি স্ক্রু গেজের চক্রাকার স্কেলের মোট ঘর সংখ্যা 100 এবং স্ক্রু পিচ 0.1 cm। এই স্ক্রু গেজের সাহায্যে একটি পাতের বেধ মেপে মূল স্কেল ও চক্রাকার স্কেলের পাঠ পাওয়া গেল যথাক্রমে 0.3 cm ও 25। পাতটির বেধ নির্ণয় করো।

স্ক্রু গেজটির লঘিষ্ঠ ধ্রুবক, `c = \frac{0.1}{100} = 0.001` cm

দেওয়া আছে, মূল স্কেলের পাঠ, `a = 0.3` cm এবং চক্রাকার স্কেলের পাঠ, `b = 25`। সুতরাং, পাতটির বেধ, `d = a + b × c = 0.3 + 25 × 0.001 = 0.3 + 0.025 = 0.325` cm।

পরোক্ষ পদ্ধতি: এতক্ষণ যা আলোচনা করলাম, সব ছিল প্রত্যক্ষ পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্যের পরিমাপ। একটি সাধারণ মিটার স্কেল দিয়ে `10^-3` m থেকে `10^2` m পর্যন্ত দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা যায়। ভার্নিয়ার ক্যালিপার `10^-4` m পর্যন্ত সূক্ষ্ম দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে পারে। স্ক্রু গেজ `10^-5` m দৈর্ঘ্য পর্যন্ত সূক্ষ্ম পরিমাপ করতে পারে। এখন আমরা পরোক্ষ পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্য পরিমাপ আলোচনা করব। সাধারণত খুব বড় দূরত্ব পরিমাপ করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।

Triangulation method: ধরো, একটি মিনারের উচ্চতা, AB = h তোমাকে পরিমাপ করতে হবে। B বিন্দু থেকে x দূরত্বে C বিন্দুতে তুমি দাঁড়িয়ে আছো। যদি তুমি ওই বিন্দুতে ACB কোণ এর মান জানো, তাহলে সমকোণী ত্রিভুজ ∆ABC থেকে বলা যায়, tan`\theta = \frac{AB}{BC} = \frac{h}{x}` বা, `h = x tan\theta` 

যদি x ও `\theta` -এর মান জানো তাহলে h এর মানও বের করা যাবে।

উদাহরণ: ভূপৃষ্ঠের কোন একটি স্থান থেকে একটি মিনারের শীর্ষ দেশের উন্নয়ন কোণ 60°. মিনারটি থেকে ওই স্থানের দূরত্ব 50 m। মিনারটির উচ্চতা কত?

কোণ = 60°

বা,  tan60° = √3

x = 50 m

h = x tan60° = 50√3 m

লম্বন পদ্ধতি (Parallax method):

পৃথিবী থেকে কোনো গ্রহ বা নক্ষত্রের দূরত্ব পরিমাপ করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। 

সামনের (দেওয়ালের) কোনো বিন্দুর সাপেক্ষে তোমার চোখের সামনে একটি কলম ধরো। প্রথমে ডান চোখ বন্ধ রেখে, বাম চোখ দিয়ে কলমটির দিকে দেখো এবং একইভাবে আবার বাম চোখ বন্ধ রেখে ডান চোখ দিয়ে সেটির দিকে তাকাও। দেখে মনে হবে, দেওয়ালের আগের নির্দিষ্ট বিন্দুর অবস্থান থেকে কলমটির অবস্থান পরিবর্তন হয়ে গেছে। একে বলা হয় লম্বন (parallax)। পর্যবেক্ষণের দুটি বিন্দুর মধ্যবর্তী দূরত্বকে বলা হয় ভিত্তি (basis)। এক্ষেত্রে দুটি চোখের মধ্যে দূরত্বই হলো basis।


ধরো, O বিন্দুতে কোনো ব্যক্তি তার সামনের দেওয়াল সাপেক্ষে একটি কলম তার সামনে ধরে আছে। প্রথমে ডান চোখ বন্ধ রেখে বাম চোখ, L দিয়ে কলমটি দেখলো। এরপর বাম চোখ বন্ধ রেখে ডান চোখ, R দিয়ে কলমটি দেখলো। ফলে কলমটির অবস্থান সামনের দেওয়ালটি সাপেক্ষে পাল্টে যাবে। ধরো, দুটি চোখের দূরত্ব অর্থাৎ ভিত্তি (basis), LR = b. কোণ LOR কে লম্বন কোণ (parallactic angle) বলে। এটিকে রেডিয়ান (radian) এককে মাপা হয়। যদি b, LO বা RO এর থেকে খুব ছোট হয়, তাহলে LR = b কে আমরা একটি O কেন্দ্রীয় বৃত্তের বৃত্তচাপ মনে করতে পারি যার ব্যাসার্ধ, LO = RO = x। সুতরাং, `\theta = \frac{b}{x}` বা, `x = \frac{b}{\theta}`

দূরের কোনো নক্ষত্রের দূরত্ব নির্ণয়:

ধরো, C হলো পৃথিবীর কেন্দ্র। A ও B ভূপৃষ্ঠে ব্যাস বরাবর বিপরীত দুটি বিন্দু। S হলো নক্ষত্রটির অবস্থান। `\theta_1` ও `\theta_2` হলো যথাক্রমে A ও B বিন্দু থেকে দূরের কোনো নক্ষত্রের সাপেক্ষে এই নক্ষত্রটির লম্বন কোণ (অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল টেলিস্কোপ এর সাহায্যে জানা)। তাহলে নক্ষত্রটির মোট লম্বন কোণ, ASB = `\theta = \theta_1 + \theta_2`

যেহেতু, নক্ষত্রটি অনেক দূরে, AB << SC বা, `\frac{AB}{SC }`<< 1, এবং এজন্য `\theta` ও খুব ছোট। এই অবস্থায় আমরা AB কে S কেন্দ্রীয় বৃত্তের একটি বৃত্তচাপ ভাবতে পারি, যেখানে SC হলো ওই বৃত্তের ব্যাসার্ধ (radius)। AS = BS = SC (যেহেতু গ্রহটি অনেক দূরে এবং AB, SC এর তুলনায় খুব ক্ষুদ্র)। সুতরাং, AB = SC `\theta` বা, SC = `\frac{AB}{\theta}`

AB এবং `\theta` এর মান জানা থাকলে আমরা নক্ষত্রটির দূরত্ব (SC) বের করতে পারবো।

Leave a Reply:

Previous Post Next Post